শাড়ী কি নারীত্বের প্রতীক?

 শাড়ী কি নারীত্বের প্রতীক? শাড়ী না পরলে কি পরিপূর্ণ রূপে নারী হয়ে ওঠা যায় না?


শাড়ি আমার কাছে ভীষণ সুন্দর পোশাক। যারা তাদের বাসার নারীদের আটপৌরে অবস্থায় খালি শাড়িই পড়তে দেখেন তাদের কাছে বেশ স্মৃতি বিজরিতও বটে।



তবে নারীত্বের প্রতীক বললে একটু বেশী বলা হয়ে গেল না? ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে তো নারীরা কেউ শাড়ি পরে না। পশ্চিমা বিশ্বে পুরুষদের কাছে ও শাড়ি বেশ কিম্ভুতকিমাকার পোশাক। এসব শাড়ি না পরিহিতা নারীরা 'নারী' হয়ে উঠেন কি করে?

আমার কাছে নারীত্বের কোন নির্দিষ্ট প্রতীক নেই। মেক আপ সহ কিংবা ছাড়া, হিজাব কিংবা কোট প্যান্ট লুঙ্গি বা ড্রেস পরিহিতা, মিষ্টভাষী বা গালি ছাড়া কথাই বলতে পারে না, সবাই নারী। পেশার ক্ষেত্রে ও যুগ যুগ ধরে চলে আসা লিঙ্গভিত্তিক বইষম্য আজকাল ভুল বলে প্রমানিত হচ্ছে।

নারীত্বের ধারক ও বাহক নারী নিজে। কোনও মানুষকে represent করতে পোশাক তেমন কোনো মুখ্য বিষয় হওয়া উচিত না।

শাড়ী , নারীর পরিধেয় নানাবিধ বস্ত্র সম্ভারেরই একটি প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে, তবে নারীত্বের প্রতীক শাড়ী, সেটা মনে করি না।

সমাজে, নানাবিধ ভূমিকায় নারীর অবস্থান তথা অবদানের মাধ্যমেই, সামগ্রিকভাবে নারীত্বের পূর্ণতা প্রতিষ্ঠিত হয়।

ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির কারণে, প্রয়োজনে, ব্যক্তিগত পছন্দ, অপছন্দের কারণে, কেউ শাড়ীর জায়গায় অন্য পোষাক পড়তেই পারেন।




"শাড়ী না পড়লে, পরিপূর্ণ রূপে নারী হয়ে উঠা যায় না", এই ভাবনার সপক্ষে কোনো যুক্তিই খুঁজে পাচ্ছি না।

সত্যিকারের কথা হল শাড়ী মানেই বাঙালির আর বাঙালি মানেই শাড়ী। বাঙালীর পরিচয়ের সাথে মিশে আছে বাঙালির অহংকার বা গর্ব। এই “শাড়ি” শব্দের উৎস সংস্কৃত “শাটী” শব্দ থেকে। ‘শাটী’ অর্থ পরিধেয় বস্ত্র। এই জন্য শাড়ী নারীত্বের প্রতীক বা শাড়ী না পরলে পরিপূর্ণ রূপে নারী হয়ে ওঠা যায়না বলে একদমই মনে করি না।

সম্ভবত ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীনতম পরিধেয় বস্ত্র এই শাড়ী, যার ব্যবহার এবং জনপ্রিয়তা আজও আকাশ ছোঁয়া। কখন কীভাবে শাড়ি উদ্ভূত হয়েছিল সে ইতিহাস খুব একটা স্পষ্ট নয়। তবে আবহমান বাংলার ইতিহাসে শাড়ির স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুগে যুগে বদলেছে শাড়ির পাড়-আঁচল, পরার ধরন আর বুনন কৌশল।

১২ হাত লম্বা একটা কাপড় বাঙালী নারীদের কাছে শুধুই সাধারণ বস্ত্র নয়। বাহারি নকশা আর নানা নামের শাড়ী পরার ষ্টাইল নারীদের ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তোলে নানাভাবে।

আজকের দিনে জরি, চুমকি পাথর আর হাতের কাজ, পেইন্টিং এর পাশাপাশি বাংলার তাঁতীরা এ শাড়ীতে ডিজাইন যা বাঙালী নারী সাজে আনে ভিন্ন মাত্রা।

শাড়ী বাদেও বাঙালী নারীকে বাঙালি বলেই বোঝা যায়। কিন্তু এটা চিরাচরিত বাঙালী জীবনের কাব্য সাহিত্যে আটপৌরে শাড়ীতে ফুটে উঠে নারী চরিত্র। অন্যদিকে বাস্তব জীবনে কালের প্রবাহে পোশাকে নানা ঘরানার প্রবেশ ঘটলেও শাড়ী একেবারে হারিয়ে যায়নি। বাহারি নকশা আর নানা নামের শাড়ী পরার ষ্টাইল নারীদের ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তোলে নানাভাবে ।


উৎসব ভিত্তিক শাড়ি আধুনিক যুগে নারীদের কাছে আর্কষনীয় বিষয়। ঐতিহ্যবাহী তাঁত, মসলিন, জামদানী, বেনারসি, সিল্ক, ঢাকাই, কানজীভরম, গিচা, ওপারা, বালুচারী, বিষ্ণুপুরি সিল্ক, সম্ভলপুরী, কোটকি, ভাগলপুরী, পিওর সিল্ক, আরো কতনা নাম..পত্নীর শাড়ী কেনার দৌলতে অনেক শাড়ীর নাম শুনেছি। শাড়ী বাঙালী নারীদের কাছে সব সময় আকর্ষনীয়।

 যদি আকর্ষণীয় না হত তাহলে বেশিরভাগ বাড়িতে আলমারীগুলি শাড়ীতে ভর্তি হয়ে যেত না। যেমন চিরাচরিত বাঙালী নারীর কাছে বিয়ের সাজের স্বপ্ন মানেই লাল, গোলাপি বা অন্য রঙের বেনারসি। আবার বৈশাখী উৎসবে লাল পাড়ে সাদা শাড়ি, বসন্তে হলুদ শাড়ী। শাড়ী না পরলেও সালোয়ার কামিজ, কুর্তা পায়জামা, পেন্ট ও শার্ট এই সবই আজকের দিনে নারীদের পরিধান। আজকের দিনে এই সমস্ত পরিধানকরি সমস্ত নারীও পরিপূর্ণ রূপেও নারী।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url